পাল বংশ এবং সেন বংশ || The Palas and Senas of Bengal

বাংলার পাল বংশ :  মাৎস্যান্যায় পরবর্তী সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য 750 খ্রিষ্টাব্দে গোপাল বাংলার রাজা নির্বাচিত হন। লামা তরানাথ পালদের ক্ষত্রিয় বললেও আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্পতে পালদের  দাসজীবীণঃ বা দাস বংশীয় শূদ্র বলা হয়েছে। সন্ধ্যাকরনন্দী তাদের সমুদ্রকুলোদ্ভব বলেছেন । খালিমপুর লিপি থেকে জানা যায় 770 খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর আগে গোপাল বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে পরমসৌগত উপাধি নিয়েছিলেন। গোপালের পুত্র ধর্মপাল কনৌজ জয় করেছিলেন। তিনি বিক্রমশীলা মহাবিহার, সোমপুরী বিহার এবং ওদন্তপুরী বিহার নির্মাণ করেছিলেন। ধর্মপালের পুত্র দেবপাল ওড়িশা ও আসাম জয় করেছিলেন। তিনি প্রতিহার রাজ ভোজ এবং রাষ্ট্রকুট রাজা অমোঘবর্ষকে পরাজিত করেন। আরবীয় পর্যটক সুলেমান দেবপালের রাজত্ব কালে ভারতে আসেন। পাল রাজা প্রথম মহীপাল চোল রাজা রাজেন্দ্রচোল কতৃক পরাজিত হন। প্রথম মহীপালের পৌত্র দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্ব কালে উত্তর বঙ্গে বরেন্দ্রভূমিতে ভীম ও দিব্য বা দিব্যকের নেতৃত্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয় । দ্বিতীয় মহীপাল এই বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে মারা যান। এর পর দ্বিতীয় মহীপালের ভাই রামপাল কৈবর্ত বিদ্রোহ দমন করেন। রামপালের সভাকবি সন্ধ্যাকরনন্দীর ' রামচরিত ' রামপালেরই জীবনী মাত্র। রামপালের রাজধানী ছিল রামাবতী। মদনপাল ছিলেন পাল বংশের শেষ রাজা।

সেন বংশ : সামন্ত সেন বাংলায় সেন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।   সেন দের আদি বাসস্থান ছিল মহীশূর বা কর্ণাটক। সেনরাজা হেমন্ত সেনের পুত্র বিজয় সেন বাংলার শেষ পাল রাজা মদন পালকে পরাস্ত করে বাংলায় সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠা করেন। সেনরা জাতিতে ব্রাক্ষ্ম-ক্ষত্রিয় ছিল । পরশুরামের হাত থেকে বাঁচতে যেসব গর্ভবতী ক্ষত্রিয় রমণী নিজেদের ব্রাক্ষ্মন বলে পরিচয় দিয়েছিলেন , তাদের গর্ভ জাত সন্তানদের ব্রাক্ষ্ম-ক্ষত্রিয় বলাহয়  । বিজয় সেনের দুটি রাজধানী ছিল – বিজয়পুর ও বিক্রমপুর। বিজয় সেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বল্লাল সেন সিংহাসনে বসেন। তিনি হিন্দু ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান বিষয়ে দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। নবদ্বীপের শাসক বুদ্ধিমন্ত খানের নির্দেশে পণ্ডিত আনন্দভট্ট বল্লালচরিত নামে তার জীবনী রচনা করেন। মালদহের গৌড় নগরীটি তার তৈরি। পরে তার পুত্র লক্ষ্মন সেনের নাম অনুসারে এর নাম হয় লক্ষনাবতী । বল্লাল সেন কৌলীন্য প্রথার প্রচলন করেছিলেন । বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষণ সেন 60 বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের রচয়িতা  কবি জয়দেব লক্ষণ সেনের সভাকবি ছিলেন।  ঐতিহাসিক মিনহাজুদ্দিন সিরাজের লেখা ‘তবাকাত-ই-নাসিরি' গ্রন্থ থেকে জানা যায় 1199 খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বাহিনী ওদন্তপুরি বিহারকে দূর্গ ভেবে  ধ্বংস করে এবং বহু বৌদ্ধ সন্যাসীকে হত্যা করে।  1204-05 খ্রিষ্টাব্দে  বখতিয়ার খিলজী ঘোড়া ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে 18 জন অনুচর নিয়ে বাংলার নদিয়া আক্রমণ ও দখল করে । লক্ষণ সেন শ্রীহট্টের বিক্রমে পালিয়ে যান এবং 1206 সালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। 1260 খ্রিষ্টাব্দে লক্ষণ সেনের পুত্র কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেন মারা গেলে সেন রাজত্বের পতন ঘটে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url